Sunday, January 02, 2022

আবোল তাবোলের ভুতুড়ে খেলা |


সুকুমার রায়ের আবোল তাবোলের 'ভুতুড়ে খেলা' কবিতাটি প্রায় নিঃসন্দেহে ভারতীয় শিল্পকলায় বাংলা ঘরানার একটি প্রয়োগশৈলীর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গাত্মক ভাষ্য | কবিতাটি ১৯১৮ সালে প্রকাশিত হয়, এবং এটির অনুপ্রেরণা সম্ভবত ১৯১৭ সালে অঙ্কিত, 'আঁখি পাখি ধায়' নামক একটি চিত্র, যেটি এঁকেছিলেন খ্যাতিমান বাঙালি চিত্রশিল্পী এবং লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর | ছবিটি অবন ঠাকুর সেই বৎসর 'ভারতী' পত্রিকায় ওঁর স্বলিখিতি একটি নিবন্ধ সহকারে প্রকাশ করেন, শিল্পকলায় 'ভাব' এবং 'অন্তর্দৃষ্টি'র সমর্থনে |
'ভুতুড়ে খেলা' কবিতার অনুপ্রেরণা আসলে 'আঁখি পাখি ধায়' ছবিটি এবং নিবন্ধটি হলেও, কবিতাটিতে ব্যাঙ্গের বিশেষ লক্ষ্যবস্ত হিসাবে সুকুমার রায় নির্বাচন করেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই দশ বৎসর পূর্বের অন্য একটি সৃষ্টি – ১৯০৮ সালে জলরঙে অঙ্কিত চিত্রকর্ম – যার নাম 'গণেশ জননী' | ভুতুড়ে খেলার “পান্তভূতের জ্যান্ত ছানা” হলেন খুব সম্ভবত গণেশ, এবং কটকটে মুচকি হাসি হাস্যকারিনী ভূতের মা হলেন গণেশের জননী, পার্বতী |
কিন্তু, প্রথমে কিছু ইতিহাস: ১৯০৯ সাল নাগাদ বাংলার চিত্রশিল্পরসিক মহলে একটি বিতর্কের সৃষ্টি হয় | বিষয়বস্তু ছিল পাশ্চাত্যের তুলনায় প্রাচ্যের – এক্ষেত্রে বাংলার, তথা ভারতবর্ষের – চিত্রকলার প্রয়োগশৈলীতে বাস্তবানুগ আকার-নিষ্ঠতার অভাব | বিতর্কের আধার ছিল এই প্রশ্ন, যে কোনটি যথাযথ – পাশ্চাত্যের বাস্তবানুগ আকার-নিষ্ঠতা, না প্রাচ্যের – এবং অবন ঠাকুরের প্রিয় – ভাবকেন্দ্রিক প্রতীকী প্রয়োগশৈলী | বিষয়টি এক দশকেরও বেশি বিতর্কিত হয় | 'ভারতী', 'প্রবাসী, এবং 'সাহিত্য', ইত্যাদি, পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ে আলোচনা অবশেষে থিতিয়ে পড়ে সন ১৯২০ নাগাদ | ‘ভুতুড়ে খেলা’ কবিতার রচনাকালে এবং তার পূর্ববর্তী কয়েক বৎসরে, বিতর্কটি ছিল তুঙ্গে |
প্রাচ্যের প্রয়োগশৈলীর আধার ছিল কিছু বিধিগত নিয়মাবলী, যেগুলির শাসনে সংকীর্ণ নির্দেশের বন্ধনে অঙ্কিত হতো মানবদেহের অঙ্গসৌষ্ঠবের আকার এবং অনুপাত | অবনীন্দ্রনাথের লেখনী, 'ভারতশিল্পে মূর্তি'তে এর উদাহরণ পাওয়া যায়: যথা, পটলচেরা অথবা পদ্মপলাশ অক্ষ, কুক্কুটান্ড অথবা পান-আকৃতি মুখাবয়ব, ধনুকাকারম ললাট, নিম্বপত্রাকৃতি ভ্রুযুগ, কপাটবক্ষ, যথাক্রমে পুরুষ ও নারীর সিংহকটি অথবা কদলীকান্ডম কোমর, বালকদলীকান্ডম অগ্রবাহু, মৎসাকৃতি জংঘা, চম্পাকলির ন্যায় অঙ্গুলি, ইত্যাদি | উপরন্ত, নর, ক্রুর, অসুর, বাল এবং কুমার নামক বিভিন্ন 'শ্রেণী'র 'মূর্তি'র অঙ্কনের জন্য ছিল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আয়তনের অনুপাতের বিধিবদ্ধ ব্যাকরণ | একারণে, তৎকালীন বঙ্গীয় চিত্রকলায় কিছু অবাস্তব ধরণের মানবমূর্তি অঙ্কিত হয় – অদ্ভুত ধরণের চোখ, অতিপ্রশস্থ অথবা অতিক্ষীণ কটিদেশ এবং অস্বাভাবিক রকমের অতিলম্বিত বাহু সম্বলিত |
বিতর্কটি সমন্ধে ইংল্যান্ডের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Sussex) অধ্যাপক, পার্থ মিত্র মহাশয় তাঁর ইংরাজিতে লিখিত আর্ট এন্ড ন্যাশনালিস্ম ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া ১৮৫০-১৯২২ অকসিডেন্টাল ওরিয়েন্টেসন্স (Art and Nationalism in Colonial India 1850-1922 Occidental Orientations (Cambridge University Press, 1994)) বইটিতে সবিশেষ আলোচনা করেছেন | এই প্রসঙ্গে, অবনীন্দ্রনাথের 'বুদ্ধ এবং সুজাতা' নামক জলরঙ চিত্র সম্বন্ধে তৎকালীন 'সাহিত্য' পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধ – যেটি আসলে ছিল দীনেশ সেন মহাশয় কর্তৃক চিত্রটির জ্ঞানগম্ভীর সমালোচনার ব্যাঙ্গসূচক নকলরূপে উপহাস – থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে পার্থ মিত্র মহাশয় উপহাসটির বক্তব্য সম্বন্ধে ইংরাজিতে লেখেন, "পাঠকগণ নিবন্ধটি পড়িয়া আমোদিত হইয়াছিলেন, কারণ তাঁহারা অনুধাবন করিতে পারিয়াছিলেন যে [ব্যাঙ্গাত্মক নকল সমালোচনায়] সুজাতার [শীর্ণ বৃক্ষশাখার ন্যায়] অতিলম্বিত বাহুদ্বয়ের বর্ণনা বঙ্গীয় উপকথার পেত্নী অথবা শাঁকচুন্নির প্রতিই ইঙ্গিত করিতেছে (The passage amused the readers, for they recognized Sujata’s unnaturally long arms as referring to the arms of hideous female vampires of Bengali folktales.) |"[১]


'ভারতী', 'প্রবাসী, 'সাহিত্য', ইত্যাদি, সমসাময়িক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত আলোচনা, সমালোচনা, নিবন্ধ এবং চিঠিপত্র হতে জানা যায় যে সুকুমার রায় ছিলেন শিল্পকলায় বাস্তবানুগ আকার-নিষ্ঠতার অনুরাগী | অন্যদিকে, খ্যাতনামা শিল্প-সমালোচক অর্ধেন্দু কুমার গাঙ্গুলী মহাশয় ছিলেন অবনীন্দ্রনাথের ‘ভারতীয় চিত্রকলা পদ্ধতি'র সমর্থক | একসময় সুকুমার রায় গাঙ্গুলী মহাশয়কে বিদ্রুপ করে লেখেন যে অর্ধেন্দু বাবুর যুক্তি থেকে সুকুমার রায় বোধ করেন যে ভারতীয় চিত্রকলা পদ্ধতিতে আকার-নিষ্ঠার কোনো অবকাশই নেই; বাস্তব বস্তুর আকার এবং বর্ণ শিল্পীর উপেক্ষার বস্তু; শিল্পী চিত্রের ভাব সম্বন্ধে ধ্যান করেন এবং তাঁর অন্তর্দৃষ্টিতে যা উদয় হয়, তাই আঁকেন – চর্মচক্ষে যা দেখা যায় তা ভ্রম মাত্র |[২]
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন শিল্পকলায় 'ভাব' এর প্রবর্তক | সুকুমার রায়, অন্যদিকে, মনে করতেন যে রূপককে আক্ষরিক অর্থে ব্যক্ত করাটা হাস্যকর রকমের অযৌক্তিক |[৩] অবন ঠাকুরের দাবি ছিল যে তাঁর চিত্রকলা তাঁর 'অন্তর্দৃষ্টির' আজ্ঞাবহ | ১৯১৭ সালে 'ভারতী' পত্রিকায় 'আঁখি পাখি ধায়' নামক চিত্রটির মাধ্যমে তিনি এই অন্তর্দৃষ্টির ধারণাটিই চিত্রায়নের প্রচেষ্টা করেন | 'আঁখি পাখি ধায়' ছিল এমনি একটি ছবি যাতে কোনো পাখিই দৃশ্যমান ছিল না, বরং ছিল কামরার অভ্যন্তর হতে গবাক্ষ পথে বহিঃজগতে দৃষ্টিপাতকারিনী একটি বালিকা | অবনীন্দ্রনাথের দাবি ছিল যে ছবির বালিকাটি পিঞ্জরের পক্ষীর প্রতীক, যদিও ছবিতে কোনো পাখি নেই, কারণ চিত্রটির ভাবনায় অবনীন্দ্রনাথের অন্তর্দৃষ্টিতে পক্ষী বিরাজমান ছিল – যদিও চিত্র-অবলোকনকারীর পক্ষে তার 'উপস্থিতি' ছিল নিতান্তই মানসচক্ষে |


উপরোক্ত অবন-দর্শন অতি 'ভাব'গম্ভীর হলেও, দৃষ্টশিপ্লের পরিপ্রেক্ষিতে ছিল হাস্যাস্পদ | এর উত্তরে ওঁরই প্রাক্তন ছাত্র, ব্যাঙ্গচিত্রকার যতীন সেন আঁকেন 'দ্য কুইন কনটেমপ্লেটিং দ্য বার্ড (The Queen Contemplating the Bird)’ – যার বাংলা তর্জমা, 'রাজমহিষীর পক্ষী অবলোকন' | ব্যাঙ্গচিত্রটির বিষয়বস্তু ছিল হস্তধৃত খাঁচায় পাখি সমেত এক রাজরানী, যাঁর চোখের দৃষ্টি ছিল পিঞ্জরের পক্ষীর সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে | বক্তব্য এই, যে রাজমহিষী পক্ষী অবলোকন করিতেছেন, তবে অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা |[৪]


সুকুমার রায়ের "ভুতুড়ে খেলা" কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় সন্দেশ পত্রিকার ১৯১৮ সালের এপ্রিল-মে সংখ্যায় | রচনাকাল সম্ভবত ১৯১৮ সালের একেবারে গোড়ায়, নয়তো ১৯১৭ সালের শেষের দিকে | কালক্রমের হিসাব অনুযায়ী এবং বিষয়বস্তু সম্বন্ধে সুকুমার রায়ের মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে কবিতাটির তাই ১৯১৭ সালের 'আঁখি পাখি ধায়' চিত্রটির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে থেকে থাকার সম্ভাবনা প্রবল |
এই বিশ্লেষণে আগেই বলা হয়েছে যে 'ভুতুড়ে খেলা' কবিতার অনুপ্রেরণা আসলে 'আঁখি পাখি ধায়' চিত্রটি হলেও, কবিতাটিতে ব্যাঙ্গের বিশেষ লক্ষ্যবস্ত হিসাবে সুকুমার রায় নির্বাচন করেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই অন্য একটি চিত্রকর্ম – যার নাম 'গণেশ জননী' | ‘গণেশ জননী’ চিত্রটিতেও অবনীন্দ্রনাথ তাঁর 'ভারতীয় চিত্রকলা পদ্ধতি'র প্রয়োগ করেছিলেন | 'সাহিত্য' পত্রিকা এই ছবিটি সম্বন্ধে মন্তব্য করেন যে তাঁরা হাতিশুঁড়ো গণেশ ঠাকুর সম্বন্ধে তেমন চিন্তিত নন, বরং সেই সব শিল্পীদের সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন, যাঁরা তাঁদের জলরঙের তুলি আপন শুঁড়ে ধারণ করে থাকেন |[৫]


'ভুতুড়ে খেলা' কবিতাটিতে যে একাধারে (১) অবনীন্দ্রনাথের ‘ভারতীয় চিত্রকলা পদ্ধতি’র বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গাত্মক ভাষ্য বর্তমান, (২) কবিতাটির অনুপ্রেরণা যে অবনীন্দ্রনাথের 'আঁখি পাখি ধায়' ও তার আনুষাঙ্গিক 'অন্তর্দৃষ্টি' সম্বন্ধিত নিবন্ধ এবং (৩) কবিতাটির লক্ষ্যবস্তু যে 'গণেশ জননী' চিত্রটি, তা আবিষ্কার করতে বিশেষ বেগ পেতে হয় না |
প্রথমত, অবনীন্দ্রনাথের 'অন্তর্দৃষ্টি'কে ব্যঙ্গ করে সুকুমার রায় লেখেন যে তিনি "পষ্ট চোখে [দেখছেন] বিনা চশমাতে" – অর্থাৎ, ওঁর দর্শন চর্মচক্ষের দর্শন, অন্তর্দৃষ্টির চশমার সাহায্য বিনা |
দ্বিতীয়ত, চর্মচক্ষে দৃশ্য 'গণেশ জননী' ছবিটির গণেশ এবং গণেশের মা পার্বতীকে "পান্তভূতের জ্যান্ত ছানা" এবং "ভূতের মা" তে রূপান্তরকরণ খুব সম্ভবত 'সাহিত্য' পত্রিকায় অবনীন্দ্রনাথের 'বুদ্ধ এবং সুজাতা' ছবিটির সুজাতার পেত্নীর মতো হাতের ব্যঙ্গ দ্বারা অনুপ্রাণিত | অবন ঠাকুরের ছবিটির ঈশান কোনে, আকাশে এক ফালি চন্দ্রকলাও পরিলক্ষন করা যায় – তাই "করছে খেলা জোছনাতে" পংক্তিটিও সম্ভবত 'গণেশ জননী' ছবিটির দিকেই ইঙ্গিত করে | ছবিটিতে গণেশ যে ক্রীড়ারত, তা সহজেই বোধগম্য |
তৃতীয়ত, প্রায় সমগ্র কবিতাটি জুড়েই – ভূতের ছানার প্রতি ভূতের মায়ের আদরের সম্বোধনগুলি – যথা, "আদর–গেলা কোঁত্‌কা", "ওরে আমার হোঁত্‌কা", "ময়দাঠাসা নাদুস্‌", ইত্যাদি, স্পষ্টতই ইঙ্গিত করে যে ছানাটি ছিল গোলগাল, হৃষ্টপুষ্ট | বঙ্গদেশের ভূতের বর্ণনায় 'হৃষ্টপুষ্ট' বিশেষণটির ব্যবহার বিরল – তার উল্টোটিই বরং সার্বজনীন ভাবে সত্য | কিন্তু, কবিতার ভূতের ছানা যদি ছবির গণেশের প্রতীক হয়ে থেকে থাকে, এ কথা অনস্বীকার্য যে 'হৃষ্টপুষ্ট' বিশেষণটি গণেশের যথোপযুক্ত বটে | অবশ্য সুকুমার রায় ভূতের মাকে দিয়ে ভূতের ছানাকে সটান "গোবরা গণেশ"ও বলিয়েছেন – তবে গণেশের সনাক্তকরণে এটি অমীমাংসাকারী, কারণ বাগ্ধারাগত ব্যবহারে 'গোবরা গণেশ' গণেশ ঠাকুর না বুঝিয়ে, হৃষ্টপুষ্টই বোঝায় | তবে, এখানে সুকুমার রায় দ্বর্থবোধকভাবে ছবির গণেশটিকে নিকৃষ্ট মানের – বা 'গোবরা' গণেশও হয়তো বলে থেকে থাকবেন |
আরো দ্রষ্টব্য যে কবিতার প্রথম পংক্তিতে 'অন্তর্দৃষ্টি'কে ব্যঙ্গ করে সুকুমার রায় লিখেছেন যে ভুতুড়ে খেলার দৃশ্যটি তিনি অন্তর্দৃষ্টির বদলে চর্মচক্ষেই অবলোকন করেছেন | আগে, অর্ধেন্দু কুমার গাঙ্গুলী মহাশয়ের বিরুদ্ধে মন্তব্যে সুকুমার রায় বলেছিলেন যে গাঙ্গুলী মহাশয়ের যুক্তি অনুসারে সুকুমার রায় মনে করেন যে চর্মচক্ষে যা দেখা যায় তা 'ভ্রম মাত্র' | কবিতার শেষ পংক্তিতে, তারই জের টেনে, সুকুমার রায় দাবি করেছেন যে যেহেতু দৃশ্যটি তিনি চর্মচক্ষে অবলোকন করেছেন, সেহেতু দৃশ্যটি নিশ্চয়ই ছিল ভ্রম মাত্র – "ভূতের ফাঁকি", যা নিমেষেই অন্তর্ধিত হয়েছিল - "মিলিয়ে গেল চট্‌ ক’রে !"
যদিও বিশ্লেষণের গোড়াতেই বলা হয়েছে যে কবিতাটি 'প্রায় নিঃসন্দেহে' ভারতীয় শিল্পকলায় বিরুদ্ধে ভাষ্য, নিঃসন্দেহ হতে হলে যে ধরণের অকাট্য প্রমান প্রয়োজন হয়, দুর্ভাগ্যক্রমে, তার অভাব | অতএব, উপরের ব্যাখ্যাটি যথাযথ বলে স্বীকার বা অস্বীকারের অধিকার অবশ্যই সমূর্ণভাবে পাঠকের |
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে অন্য অন্তত একটি বিশ্লেষণের মতে, কবিতার ভুতুড়ে জুড়িকে বাংলার মন্বন্তর-পীড়িত কৃশকায় সাধারণ মানুষের প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে |[৬] বাংলার দুই মহা-মন্বন্তরের কোনটিরই তারিখ 'ভুতুড়ে খেলা' কবিতাটির কালক্রমের ধারে-কাছেও অবস্থিত নয় | উপরন্ত, মন্বন্তরের বিষয়টিকে ভিত্তি করে হাস্যরসাত্মক ব্যাঙ্গাত্মক কবিতা রচনা, সুকুমার রায়ের চরিত্রের যতটুকু জানা যায়, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য বহন করে না |
সতর্কীকরণ: শখের সুকুমার-বিশ্লেষকদের দল থেকে মাঝে মাঝেই একটি ব্যাখ্যার উপস্থাপনা করা হয়ে থাকে যে 'ভুতুড়ে খেলা' কবিতার "ছিঁচকাঁদুনে ফোক্‌লা মানিক" বাক্যাংশটি নাকি সুকুমার রায়ের শিশুপুত্র সত্যজিৎ – যার ডাক নাম ছিল মানিক – তার উদ্দেশ্যে লেখা | এই চাঞ্চল্যকর 'তথ্যটি' একান্তই ভ্রান্ত | 'ভুতুড়ে খেলা' কবিতাটি রচিত হয় ১৯১৭-১৮ সালে | সত্যজিৎ, ওরেফে মানিকের জন্ম ১৯২১ |
পরিশেষে, উল্লেখযোগ্য যে মতের এতো অমিলের মধ্যেও, সুকুমার রায় কিন্তু ‘ভারতীয় চিত্রকলা পদ্ধতি’র উপর রচিত 'মূর্তি' নামক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এককগ্রন্থটি ইংরাজিতে অনুবাদ করেছিলেন, 'ইন্ডিয়ান আইকোনোগ্রাফি (Indian Iconography)’ শীর্ষক দিয়ে |
- উৎস: 'আলোয় ঢাকা অন্ধকার' - নীলাদ্রি রায়, দে'জ পাবলিশিং |
==========
• ১) Mitter, Partha. Art and Nationalism in Colonial India 1850-1922 Occidental Orientations, Cambridge University Press, 1994, 360-361
• ২) ঐ, 368
• ৩) ঐ, 368
• ৪) ঐ, 371
• ৫) ঐ, 361
• ৬) Maiti, Abhik. The Nonsense World of Sukumar Roy [sic]: The Influence of British Colonialism on Sukumar Roy’s [sic] Nonsense Poems – With Special Reference to Abol Tabol, International Journal of English Language, Literature and Translation Studies (IJELR), Vol. 3. Issue 2, 2016, 446