Monday, July 17, 2017

কাঠ-কাহিনী



কাঠ-কাহিনী

নীলাদ্রি রায়

(এর আগের ঘটনা জানা না থাকলে পড়ুন গানের গুঁতো রহস্যে ফেলুদা|)

"শীততাপ-নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটা কার আবিষ্কার মশাই?" এয়ারকন্ডিশনার এর ঠাণ্ডা হাওয়ার সামনে ভারী তৃপ্তি করে বসতে বসতে জিজ্ঞাসা করলেন লালমোহনবাবু | "লোকটার নোবেল প্রাইজ পাওয়া উচিত |"

লালমোহনবাবুর আমন্ত্রণে রবিবার সকালের আড্ডাটা আজ ওনার বাড়িতেই | সপ্তাহ দুয়েক হলো জটায়ুর লেটেস্ট উপন্যাস, অস্ট্রেলিয়ায় অষ্টরম্ভা, বেরিয়ে পড়েছে | লালমোহনবাবু অস্ট্রেলিয়া গিয়ে, সরজমিনে গোট আইল্যান্ডটা তদারক করে এসে, সেই লোকেশনকে ভিত্তি করে লিখেছেন, তাই পাঠকেরা প্রখর রুদ্রর প্রবল পরাক্রম ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া সম্বন্ধে নানান খুঁটিনাটি তথ্য জানতে পারছে | বইয়ের অভ্যর্থনা তাই অন্যান্যবারের চাইতেও ভালো | প্রথম চারদিনেই নাকি ছ-হাজার কপি বিক্রি হয়েছিল| প্রকাশকের খবরে, এখনো চাহিদায় মন্দার লক্ষণের লেশমাত্র নেই |

বই বিক্রির হিসেবে পুলকিত হয়ে লালমোহনবাবু বসার ঘরে আর শোবার ঘরে একখানা করে রুম এয়ারকন্ডিশনার লাগিয়ে ফেলেছেন | এর পেছনে একটা ছোট্ট ইতিহাসও আছে অবশ্য | গত জানুয়ারী মাসে অস্ট্রেলিয়া যাবার সময় ফেলুদার সাবধানবাণী বেমালুম ভুলে মেরে দিয়ে ভদ্রলোক ফ্ল্যানেলের গরম জামা-গেঞ্জি ভর্তি সুটকেস গুছিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন | অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে গরমে নাজেহাল হয়ে খেয়াল হয় যে দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত হওয়ার দরুন ওখানে তখন গ্রীষ্মকাল | লালমোহনবাবু বলেছেন যে পিঠোপিঠি দু-দুটো গ্রীষ্মকাল ওনার ধাতে সইবেনা - তাই এসির ব্যবস্থা | তা, ব্যাপারটা বেশ সময়োপযোগী হয়েছে | কলকাতায় বেজায় গরম পড়েছে এবার | তাই এয়ারকন্ডিশনার এর হাওয়াটা মন্দ লাগছেনা |

লালমোহনবাবুর প্রশ্নটা শুনে ফেলুদা একটা একপেশে হাসি হাসলো | বললো, "প্রথমেই বলে রাখি, লালমোহনবাবু, জলীয় পদার্থ বাস্পে পরিণত হলে পার্শ্ববর্তী জায়গা যে ঠান্ডা হয়, সেটা ফারাওদের সময়কার প্রাচীন মিশরেও জানা ছিল | তবে আপনি যে ধরণের এয়ারকন্ডিশনার এর কথা বলছেন, সেটা সফল বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আবিষ্কার হয় ১৯০২ সালে | আবিষ্কারক উইলিস ক্যারিয়ার নামে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক স্টেট্ এর বাফেলো শহরের এক ইঞ্জিনিয়ার | ক্যারিয়ার এয়ারকন নামটা শুনে থাকবেন | ওই উইলিয়াম ক্যারিয়ার এর নামেই কোম্পানির নাম |"

"বাঃ, বাঃ, নতুন জিনিস জানা গেলো, মশাই!"

"তবে এয়ারকন্ডিশনার এর বাংলা নামটা বলতে আপনার একটু ভুল হয়ে গিয়েছে কিন্তু - বাংলা কথাটা শীততাপ নয়, শীতাতপ - শীত যুক্ত আতপ | ঠাণ্ডা-গরমের নিয়ন্ত্রণ থেকেই শীতাতপ-নিয়ন্ত্রণ এর উৎপত্তি |"

"ঈশ! ভাগ্যিস বইতে বরাবর এয়ারকন্ডিশনারই লিখে এসিচি!”, জিভ কেটে বললেন লালমোহনবাবু | "আপনার কাছে বিদ্যে ফলাতে গিয়ে আজ খামোকা বিপাকে পড়লুম | আর ভুল হবেনা ! জয় বাবা ক্যারিয়ার সাহেব ! যাক, তাহলে ক্যারিয়ারএর ক্যারিশমাতেই আজ এই বেজায় গরমেও আপনাদের ইনভাইট করে ঠাণ্ডা হাওয়া খাওয়াতে পারছি !"

"তা পারছেন," সামনের প্লেটে রাখা একটা গরম শিঙাড়া তুলে নিয়ে কামড় দিয়ে বললো ফেলুদা | "তবে সাথে গরম চা-জলখাবারও যখন রয়েছে, তখন কেবল ঠাণ্ডা হাওয়া খাওয়ানো যে আপনার উদেশ্য নয় সেতো বুঝতে পারছি |"

"হেঁ-হেঁ, ধরেছেন ঠিক!" লালমোহনবাবু চার আনা লজ্জিত আর বারো আনা বিগলিত হলেন | "আসলে হয়েছে কি, ওই গানের গুঁতো কবিতাটার মানের রহস্যোদঘাটনের সময় জেনেছিলুম যে আরো অনেক কবিতার মানে ধরে ফেলায় আপনি বিশেষ কেরামতি দেখিয়েছেন, কিন্তু গল্পগুলো আর জানা হয় নি| তাই ভাবছিলুম, এখন তো আপনার হাতে কেস টেস নেই, যদি এক-আধখানা ব্যাখ্যা করে বলেন |”

"কোনটার প্রতি আপনার বিশেষ পক্ষপাত, লালমোহনবাবু?" জানতে চাইলো ফেলুদা |

ইয়ে, তপেশরঞ্জন বলেছিলো, আমার মনে আছে, যে কাঠ বুড়ো কবিতাটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জন্য ভারতবর্ষে সৈনিক সংগ্রহের ওপরে লেখা | শুনে অব্দি কৌতূহলটা পেটের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে | ঐটে কেমন করে হলো সেটা বলবেন কি?"

"বলতে আর বাধা কোথায়?" শিঙাড়াটা শেষ করে চায়ের পেয়ালাটা তুলে নিতে নিতে বললো ফেলুদা, "তবে ঘটনাটা ইন্টারেস্টিং হলেও এমডেন-সিডনীর নৌযুদ্ধের মতো রোমহর্ষক নয় কিন্তু! তাছাড়া, গানের গুঁতোর মতো রহস্য-গল্পের স্বাদ এতে পাবেন কিনা সন্দেহ | বরং ব্যাপারটা রহস্য ছাড়াই যেন রহস্য-গল্পের শেষ পরিচ্ছেদে গোয়েন্দার রহস্য উন্মোচনের মতো মনে হবে| আবহ সংগীত-টঙ্গীত টপকে একেবারে সোজা ক্লাইম্যাক্স | তাতে কিন্তু তেমন ভালো গল্প হয় না!"

"সে না হোক! আপনি বলুন", আবদার করলেন লালমোহনবাবু, "জিনিসটা তো জানা যাবে! ছোটবেলায় এথেনিয়াম ইনস্টিটিউশনের বাংলার মাস্টারমশাই বৈকুণ্ঠনাথ মল্লিক কবিতায় লিখেছিলেন:

এই: মন কত অজানারে নাহি জানে, তাই: রাখি চক্ষু-কর্ণ খোলা চারি পানে | সদা: কান পাতি' শুনি, ইতি-উতি চাই, যদি: অমূল্য রতন মেলে উড়াইয়া ছাই |

'এই’, ‘তাই’, ‘সদা' আর যদি'-র ব্যবহারটা লক্ষ্য করেছেন? ইউনিক!"

আমার অবশ্য চারি পানে চক্ষু-কর্ণ খোলা রাখা আর ইতি-উতি টা মোটেই কাব্যিক বলে মনে হলো না | তবে লালমোহনবাবু আবার যদি বৈকুণ্ঠ মল্লিক চুঁচুড়ার লোক হবার দোহাই দেন, সেই মনে করে চেপে গেলাম | ফেলুদা পরে বলেছিলো যে লালমোহনবাবু যেটাকে ইউনিক বললেন সেটা মোটেই ইউনিক নয় - প্রাচীন গ্রীক দের সময় থেকেই নাকি চালু আছে | গ্রীক 'এনাফোরা' আর 'এপিফোরা' নামক কাব্যিক কারসাজির মিশ্রণ | তবে ভদ্রলোক ইতি-উতির বদলে ‘কান পাতি' র সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে 'চোখ মেলি' লিখলেই বোধহয় ভালো করতেন |

বৈকুন্ঠ মল্লিকের ওপরে তো আর কথা চলেনা |”, পাক্কা অভিনেতার কায়দায় ভাবলেশহীন মুখ করে বললো ফেলুদা | “শুনুন তাহলে | আবোল তাবোলের যে কোনো কবিতার মানে বুঝতে হলে প্রথমেই শুরু করতে হয় কবিতাটির প্রথম প্রকাশনার তারিখ থেকে |”

সেটা কেন, ফেলুবাবু?”

আবোল তাবোলের বেশির ভাগ কবিতাতেই সুকুমার রায় যে ব্যঙ্গ বা টিপ্পনি করে গেছেন তা কবিতা লেখার সমসাময়িক কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে”, চায়ের পেয়ালায় একটা চুমুক লাগিয়ে বললো ফেলুদা “এক্ষেত্রে কাঠ বুড়ো কবিতাটার সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশনার তারিখ ১৯১৫ সালের ফেব্রুয়ারী-মার্চ নাগাদ | অর্থাৎ, কবিতাটা লেখা হয় তার থেকে আরো মাস কয়েক আগে | কিন্তু সে কথায় পরে আসছি - আপনি মার্শাল-রেসেস্ থিওরির নাম শুনেছেন?"

"সে আবার কি রকম রেস্, ফেলুবাবু?" লালমোহনবাবুর হাঁ-করা প্রশ্ন, "ঘোড়দৌড়, না মানুষের?"

"এ রেস্ সে রেস্ নয়, লালমোহনবাবু! এখানে রেসের মানে দৌড়-প্রতিযোগিতা নয় | এই রেস্ হলো গিয়ে জাতি |

"বুঝলুম", বললেন লালমোহনবাবু | "তবে মার্শাল বললেন - সামরিক জাতি আবার কি বস্তু?"

"ঠিক সামরিক নয়, লালমোহনবাবু | বাংলায় যোদ্ধৃজাতি বলে একটা খটোমটো শব্দ আছে, যেটা কিনা সরাসরি মার্শাল-রেসেস্ এরই প্রতিশব্দ | যুদ্ধনিপূণ, যুদ্ধকুশলী বা যুদ্ধপযুক্ত জঙ্গী জাতি বলতে পারেন |”

"অনেকটা তাহলে আমাদে রাজপুত বা নেপালি গোর্খাদের মতো |", বললেন লালমোহনবাবু |

"পারফেক্ট বলেছেন! আর মজার কথা হলো এই, যে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে আজও একটি গোর্খা রেজিমেন্ট আছে | এখনো ফী-বছর ব্রিটিশ আর্মি নেপালে গিয়ে এই রেজিমেন্টের জন্য রিক্রুটমেন্ট - মানে সৈনিক সংগ্রহ করে থাকে | গোর্খা যুবকদের কাছে এটি একটি অত্যন্ত লোভনীয় চাকরি | একবার সিলেক্ট হয়ে গেলে আর সারা জীবনের মতো ভাবনা নেই |"

"অন্তত যতক্ষণ না আবার যুদ্ধ শুরু হচ্ছে!", মন্তব্য করলেন লালমোহনবাবু | কথাটা নেহাত ভুল বলেন নি |

"মোদ্দা কথা, মার্শাল-রেসেস্ থিওরি - সামরিক তত্ত্ব হিসাবে যার বিকাশ ব্রিটিশ সেনাবাহিনী কিনা সিপাহী বিদ্রোহের কিছু পরে থেকেই ঘটাতে শুরু করে - তার আধার বা ভিত্তি ছিল এই বিশ্বাস, যে কিছু কিছু বিশেষ জাতির লোকেরা যুদ্ধ বা সামরিক পেশার জন্য বেশি মাত্রায় উপযুক্ত | কেবল শৌর্যবীর্য্য নয়, জাতির লোকেদের বিশ্বস্ততা, আনুগত্য ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যও ছিল মার্শাল-রেসেস্ থিওরির অঙ্গ |”

১৯১৪ সালের আগস্ট মাসে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ |", বলতে থাকলো ফেলুদা| "ব্রিটেনে এবং ব্রিটিশ শাসিত কলোনিগুলিতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় যুদ্ধের জন্য সৈনিক রিক্রুটমেন্ট | ভারতেও হয়েছিল | আর রিক্রুটমেন্টের ডাকে সাড়াও পড়েছিল ভালোই | ব্রিটিশ সরকার কিন্তু রিক্রুটমেন্টে মার্শাল রেসেস্ থিওরির প্রয়োগ করেছিলেন |"

"ও বাবা! সেই সেপাই মিউটিনির সময় থেকেই ব্রিটিশ সরকার মারকুটে জাতি-প্রজাতির হিসেব রাখছিলো নাকি?"

"তা একটা মোটামুটি ধারণা তাদের ছিল বই কি!", বললো ফেলুদা| "তবে ইতিমধ্যে ব্যাপারটা আরেকটু বৈজ্ঞানিক স্তরে রিসার্চ করার চেষ্টা করেন এক ব্রিটিশ আই সি এস অফিসার, যাঁর নাম ছিল হার্বার্ট রিসলি |

"হার্বার্ট -"

"হ্যাঁ, লালমোহমবাবু | পুরো নাম হার্বার্ট হোপ রিসলি | এবার কিন্তু এটা আপনার আসল হার্বার্ট | অর্থাৎ, হার্ভার্ড য়ুনিভার্সিটির হার্বার্ট নয় ", মুচকি হেসে বললো ফেলুদা |

"বুঝলুম!" অনেক দিন আগের ভুলটা মনে করিয়ে দেওয়াতে বিরস কণ্ঠে জবাব দিলেন লালমোহনবাবু |

"রিসলি-সাহেব তখনকার বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির নানা উপজাতিদের নিয়ে একটি মোটামুটি স্টাডি করেছিলেন | স্টাডির পদ্ধতিতে যদিও অনেক ভুলভ্রান্তি ছিল - যেটা আজ জানা যায় | তাছাড়া, হিন্দুধর্মের বামুন, কায়েত, বৈশ্য, শূদ্র, ইত্যাদি জাত ভেদাভেদও এই স্টাডির অঙ্গ হয়ে পরে |

বলেন কি! রিসলি-সাহেব হিন্দুধর্মের জাতিভেদও সামরিক পেশায় নিয়োজনের উপযুক্ততাকে ইনফ্লুয়েন্স করে বলে মনে করেছিলেন নাকি?” শুধোলেন লালমোহনবাবু |

তবে আর বলছি কী !", বললো ফেলুদা | “তার ওপর রিসলি আবার ১৯০১ সালের ভারতের আদমশুমারি বা লোকগণনার সেন্সাসেরও ভারপ্রাপ্ত ছিলেন | স্টাডির ফলাফলগুলি সম্প্রসারিত করে তিনি সমগ্র ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার লোকসম্প্রদায়ের একটা শ্রেণীবিভাজন করে ফেলেন |”

"লে হালুয়া!"

হালুয়া নয়, লালমোহনবাবু | বরং জগাখিচুড়ি বলতে পারেন | জাত ভেদাভেদের হিসেবটা রিসলি অন্য ধর্মের লোকেদের ওপর কি ভাবে চাপিয়েছেলেন তা ভগবানই জানেন! রিসলি মারা যান ১৯১১ সালে, কিন্তু ১৯১১র সেন্সাসেও রিসলির শ্রেণীবিভাজন সমানে চালু থাকে | আদমশুমারি হয়ে থাকে দশ বছরে একবার | তাই ১৯১৪র রিক্রুটমেন্টের সময়ে ১৯১১র সেন্সাস এর তালিকাই ব্যবহৃত হয় |"

"মারকুটে জাতি খুঁজতে তাহলে ব্রিটিশ সরকার ওই রিসলি-সাহেবের সেন্সাসেরই দ্বারস্থ হয়েছিল?" প্রশ্নটা অপ্রয়োজনীয় হলেও, করে ফেললেন লালমোহনবাবু |

"ঠিক তাই!", বললো ফেলুদা | "আপনি ইংল্যান্ডের হাল (Hull) য়ুনিভার্সিটির ডেভিড ওমিস্সী নামক ভদ্রলোকের ১৯৯৮এ লেখা 'দ্য সেপোয় এন্ড দ্য রাজ্ - দি ইন্ডিয়ান আর্মি, ১৮৬০-১৯৪০' বইটি পড়লে এর বিস্তারিত বিবরণ ও পাবেন |"

"থাক, তার আর দরকার নেই", বললেন লালমোহনবাবু | হাল উনিভার্সিটির ইংরিজি বই পড়তে গিয়ে হালে পানি পাবো না | অস্ট্রেলিয়া ঘুরতে গিয়েই যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে মশাই!"

এ ব্যাপারটা জানা ছিলো না | চট করে জিজ্ঞেস করে ফেললাম, "কেন, লালমোহনবাবু? কি হয়েছিল?"

"সে আর বোলো না তপেশ ভাই!" দুঃখ করলেন লালমোহনবাবু | "সবে সিডনী এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে পৌঁছেছি | টমাস কুকের বিধুবাবু বাস থেকে ট্যুরের সকলের লাগেজ নামানোর তদারকে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আমাকে ভিড়িয়ে দিয়েছিলেন হোটেলএর রেজিস্ট্রেশনে | রিসেপশনের লোক আমায় জিজ্ঞেস করলে: 'হাউ মেনি মাইলস?' কলকাতা থেকে সিডনী কত মাইল আমি থোড়াই জানি! ভেবে বললুম, 'টেন থাউজ্যান্ড' | সে অস্ট্রেলিয়ান আবার বলে, 'নো নো হাউ মেনি মাইলস?' বলো দিকি কী বিপদ! আবার বললুম, 'আই সেড তো, যে টেন থাউজ্যান্ড - মেবি মোর?' লোকটা তবুও বলে 'নো, নো, নো - ইন ইওর গ্রূপ - হাউ মেনি মাইলস এন্ড হাউ মেনি ফি-মাইলস, মাইট?' তখন বুঝতে পারি ব্যাটা হাউ মেনি মেলস এন্ড হাউ মেনি ফিমেলস শুধোচ্ছে! মাইট টা যে কি, তা আজও জানিনা |"

"মাইট টা মেট (mate), মানে ফ্রেন্ড, লালমোহনবাবু", বললো ফেলুদা | “দোষটা আপনার নয়, দোষটা অস্ট্রেলিয়ানদের উচ্চারণের |"

"ও হরি! আসলে হয়েছে কি, ইংরিজিতে চিরকালই কাঁচা ছিলুম কিনা, তাই সবই নিজের ভুল বলে মনে হয়! সে যাকগে - মার্শাল-রেসেস্ এর কথা বলছিলেন: বাঙালি জাতিকে ব্রিটিশ সরকার মার্শাল-রেসেস্ এর মধ্যে খুব একটা গণ্য করেনি বলে গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে!", বললেন লালমোহনবাবু |

"ধরেছেন ঠিকই", ফেলুদা সম্মতি জানালো, "কিন্তু সেটা শুধু ওই জঙ্গী জাতির বিবেচনায় নয় | সেই সময়ের ব্রিটিশ সরকারের আভ্যন্তরীন মেমো - যা কিনা আজ পড়তে পাওয়া যায় - পড়লে জানতে পারবেন যে বাঙালিদের একটু অনিচ্ছুক সমীহ করে চলতো ব্রিটিশ সরকার | মেমোগুলি পড়লে জানা যায় যে বাঙালির রাজনৈতিক সচেতনতা আর স্বদেশচিন্তা সম্বন্ধে বৃটিশ সরকার থাকতো সর্বদাই উদ্বিগ্ন |"

"তাহলে সৈনিকসংগ্রহে বাঙালি বাদ দেবার অপচেষ্টা হয়েছিল বলছেন?"

"প্রকাশ্য ভাবে হয় নি, কিন্তু একটা প্রচ্ছন্ন অন্ত:প্রবাহ ছিল বই কি!" জানালো ফেলুদা, "তার ওপর রিসলির সেন্সাসের শ্রেণীবিভাজনের একটা অনিচ্ছাকৃত সামাজিক পরিণতিও ছিল | পি. পদ্মনাভ, যিনি কিনা ১৯৭১ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত স্বাধীন ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল ছিলেন, ১৯৭৮ সালে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন যাতে তিনি লেখেন, '... ১৯১১র সেন্সাসের সময়, বিশেষ করে বাংলায়, বেশির ভাগ লোকেরই ধারণা জন্মেছিল যে সেন্সাস এর উদেশ্য লোকগণনা নয়, বিভিন্ন জাতের তুলনামুলক মর্যাদাক্রম করা |"

"সেন্সাস ব্যাপারটার বেশ আনপপুলার হবার সম্ভাবনা ছিল তাহলে!" অনুধাবন করলেন লালমোহনবাবু |

হ্যাঁ, যথেষ্ট অপ্রিয় ছিল |" জানালো ফেলুদা, "বিশেষ করে ইন্টেলেকচুয়ালদের মধ্যে তো বটেই! আন্দাজ করতে পারছেন নিশ্চয়, আমি বলতে চাইছি যে এই সৈনিকসংগ্রহের ব্যাপারে মার্শাল-রেসেস্ থিওরির প্রয়োগ কাঠবুড়ো কবিতায় সুকুমার রায়ের শ্লেষ এর লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় |”

লালমোহনবাবু মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে চমকে দিয়ে বেশ বুদ্ধিদীপ্ত তর্ক খাড়া করে বসেন | এবার করলেন | বললেন, "ফেলুবাবু, জিনিসগুলো সুকুমারবাবুর শ্লেষের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াতে পারে মানতে পারি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে লক্ষ্য হয়ে যে দাঁড়িয়েছিল, তার প্রমান কি? কাঠবুড়ো কবিতাটা নিতান্তই ছোটদের হাসানোর জন্যে লেখা ননসেন্স ভার্স | কবিতাতে শ্লেষ তো দূরের কথা, মার্শাল-রেসেস্ এর সঙ্গে কোনো কানেকশানের সম্ভাবনা তো ঘুনাক্ষরেও দেখতে পাচ্ছিনা !"

"পাচ্ছেন না?"

"নো স্যার! কাঠের আঁকজোক আর শ্রেণীবিভা- "

বিভা অবধি বলেই লালমোহনবাবু চোখ ছানাবড়া করে থমকে গেলেন | ব্যাপারটা বিভাবন করে ফেলেছেন বুঝতে পারলাম | উৎসাহে, উত্তেজনায় চোখমুখ বিভাসিত |

"কাঠগুলো বিভিন্ন রকমের জাত মিন করছে নাকি, ফেলুবাবু?!!!"

"সাবাশ, লালমোহনবাবু!" বাহবা জানালো ফেলুদা, "সুকুমার রায়ের চালাকি আপনি ধরে ফেলেছেন! জাতই mean করছে বটে! 'কোন্ কাঠ টিম্‌টিমে, কোন্‌টা বা জ্যান্ত' সম্বন্ধে কি অভিমত আপনার?"

"এ যে মেদামারা জাত আর মারকুটে জাতের কথা বলছে!"

"ভেরি গুড, লালমোহনবাবু!", বিশ্লেষণটার সরাসরি অনুমোদন জানিয়ে দিলো ফেলুদা | "আর 'কোন্ কাঠ পোষ মানে, কোন কাঠ শান্ত' লাইনটার মধ্যে বিশ্বস্ততা, আনুগত্য ইত্যাদি জাতিগত বৈশিষ্টেরও আভাস পাচ্ছেন আশাকরি?"

"আজ্ঞে হ্যাঁ! সেন্ট পার্সেন্ট পাচ্ছি!”

১৯১৪ সালে রিসলির ভ্রান্তিপূর্ণ শ্রেণীবিভাজনের ভিত্তিতে রিক্রুটমেন্ট, আর বাংলাকে রিক্রুটমেন্টের ব্যাপারে এড়িয়ে যাওয়ার কারণে সুকুমার রায় এই শ্লেষাত্মক কবিতাটি লেখেন |”, বোঝালো ফেলুদা, “ইতিহাসের হার্বার্ট হোপ রিসলি-ই হচ্ছেন আসলে কাঠ বুড়ো |”

"উরেশ্শা - ", বলে লাফিয়ে উঠেই জিভ কাটলেন লালমোহনবাবু | "কিছু মনে করবেন না - হেঁ হেঁ - সামলাতে পারিনি! আপনি কাঠ বুড়োর আসল নামটা পর্যন্ত বার করে ফেলেছেন!"

"ম্যাজিক মনে হলো নাতো লালমোহনবাবু?" মুচকি হেসে ফেলুদার প্রশ্ন, "লক্ষ্য করেছেন কি, কোন্ ফুটো খেতে ভালো, কোন্‌টা বা মন্দ / কোন্ কোন্ ফাটলের কি রকম গন্ধ' লাইনটাতে সুকুমার রায় বোঝাতে চেয়েছেন যে রিসলি সাহেব ধরেই নিয়েছিলেন যে বিভিন্ন জাতের শ্রেণীবিভাজন করে তিনি জঙ্গী জাতি আর অন্যান্য জাতি সব আইডেন্টিফাই করে ফেলেছেন? ম্যাজিক মনে হলে আমার কিন্তু কিছু বলার নেই | আমি কিন্তু আপনাকে আগাগোড়া সাক্ষ্য-প্রমান দিতে দিতেই এতদূর এনেছি!"

"সাক্ষ্য-প্রমানের জবাব নেই, ফেলুবাবু!" ঘোষণা করলেন লালমোহনবাবু | "কাঠের ব্যাপারটা দিব্বি বোঝা গেছে! তবে ওই আঁকজোকের ব্যাপারটা? মানে ওই 'আশে পাশে হিজি বিজি আঁকে কত অঙ্ক / ফাটা কাঠ ফুটো কাঠ হিসাব অসংখ্য', সেটা?

"সেটার ও মানে আছে, লালমোহনবাবু | রিসলির গবেষণার ভিত্তি ছিল ইংরেজিতে যাকে বলে এনথ্রোপোমেট্রিক মেজারমেন্ট - মানবদেহের নানান বৈশিষ্টের মাত্রাবিজ্ঞান বলতে পারেন, যেমন, বুকের ছাতি, হাড়ের মাপ, ইত্যাদি | 'হিজি বিজি আঁকে কত অঙ্ক' লাইনটা সেটাই বোঝায় |”

"কিন্তু মাপজোকে গলদ ছিল বলছিলেন?"

"ছিল", বললো ফেলুদা, "উনি নমুনা বা স্যাম্পল হিসাবে যতসংখক মাপজোক নিয়েছিলেন, পরিসংখ্যানবিজ্ঞান বা স্ট্যাটিসটিক্স এর হিসাবে সেটা ছিল খুবই অল্প | তা দিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য নির্ণয়ে পৌঁছানো যায়না | ক্রিস্পিন বেটস নামে এক ভদ্রলোকের লেখা 'রেস্, কাস্ট এন্ড ট্রাইব ইন সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া - দি আর্লি অরিজিন্স অফ ইন্ডিয়ান এনথ্রোপোমেট্রি' বইটিতে রিসলির এই ভুলের আলোচনা পাওয়া যায় | কাঠবুড়োকে দিয়ে 'আকাশেতে ঝুল ঝোলে, কাঠে তাই গর্ত' এই রকম অর্থহীন কথা বলিয়ে সুকুমার রায় রিসলির অ-বৈজ্ঞানিক ফলাফলের আকাশকুসুমের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন |"

"উঃ কী প্রতিভা, মশাই! একবারটি ভাবুন দিকি! আকাশকুসুম বোঝাতে একেবারে আকাশে ঝুল ঝুলিয়ে দিয়েছেন!"

একটা ফাইনাল মজার ব্যাপার আছে কিন্তু, লালমোহনবাবু", বললো ফেলুদা, "কাঠবুড়ো কবিতার পাণ্ডুলিপি দেখলে জানা যায় যে অরিজিনাল খসড়া থেকে সুকুমার রায় গোটা কয়েক লাইন কেটে বাদ দিয়েছিলেন | তার মধ্যে অন্যতম হলো: 'কাঠেরে কাষ্ঠ কয়, এতো ভারী অন্যায়!' আনন্দ পাবলিশার্স এর সত্যজিৎ রায় এবং পার্থ বসু সম্পাদিত সুকুমার সাহিত্য সমগ্রের তৃতীয় খন্ডে এই তথ্যটি আছে | এটা তিনি কেন করেছিলেন সেটা আন্দাজ করতে পারেন কি?"

লালমোহনবাবু অনেক ভেবেও কুল-কিনারা করতে পারলেন না | হাল ছেড়ে দিয়ে বললেন, "হলো না, ফেলুবাবু! আপনিই বলে দিন | বেশি ভাবতে গেলে ইংরিজি বোঝার চাইতেও বেশি মাথা ঝিম ঝিম করে!"

"আসলে এই জাতিভেদের সঙ্গে রিসলির জঙ্গি জাতির ব্যাপার গুলিয়ে এক করে ফেলাটা সুকুমার রায় একেবারেই বরদাস্ত করতে পারেন নি |", বললো ফেলুদা | "প্রথম খসড়াতে সেটা বেশ পরিষ্কার করেই বুঝিয়েছিলেন তিনি | পরে, খুব সম্ভব, ওনার মনে হয় যে জিনিসটা হয়তো বুদ্ধিমান পাঠক-পাঠিকাদের কাছে নেহাতই সহজবোধ্য হয়ে যাবে, তাই ওই রদবদলটি তিনি করেন |"

"অভিপ্রায়টা কিন্তু এখনো ঠিক ক্লিয়ার হলো না, ফেলুবাবু!" অনুযোগ জানালেন লালমোহনবাবু!

"এ ব্যাপারটা কিন্তু লেখক হিসাবে আপনার ভালো লাগবে লালমোহনবাবু!" জানালো ফেলুদা | "রদবদলটি করে, সুকুমার রায় caste, বা জাত শব্দটা থেকে পাঠকদের নজর হঠানোর পরিকল্পনা করেছিলেন!”

কাস্ট?” লালমোহনবাবু মানতে অরাজি হলেন: "কবিতায় কাস্ট শব্দ ছিল কই, ফেলুবাবু?"

"চিনতে পারলেন না?" ফেলুদার চোখে মিটি মিটি হাসি | “আসলে কাঠের সাধুভাষা যে কাষ্ঠ | কাষ্ঠ আর caste এর উচ্চারণগত মিলটা লক্ষ্য করেছেন কি? Caste-এর ব্যাপারটা পাঠকদের জন্যে একেবারে জলবৎ তরলং করে দিতে সুকুমার রায় চান নি | কাষ্ঠ শব্দটি তাই বাদ পড়ে |"

"কী সব্বোনেশে বুদ্ধি, মশাই!", আবার চমৎকৃত হলেন লালমোহনবাবু, "গানের গুঁতোর বিশ্লেষণের সময় আপনি সুকুমার রায় সন্বন্ধে 'সাংঘাতিক' বিশেষণটা ব্যবহার করে একদম খাঁটি কথা বলেছেন, ফেলুবাবু!"

এ ব্যাপারে আমি অবশ্য এখন লালমোহনবাবুর সঙ্গে একমত |

লালমোহনবাবু খানিক্ষন চুপ করে থেকে আকাশের দিকে দু হাত তুলে একটি নমস্কার করলেন | "ধন্যি সুকুমার রায় আর ধন্যি আপনি, ফেলুবাবু! এসব কথা পাবলিক কে জানানো দরকার! আপনি আপনার বিশ্লেষণগুলি যে আপনার বন্ধুকে বই ছাপাবার জন্য দেবেন ঠিক করেছিলেন, তার কদ্দুর?"

"বই বেরিয়ে গেছে লালমোহনবাবু |", জানালো ফেলুদা, "আপাতত অনলাইন রিটেলার দের কাছ থেকে পাওয়াও যাচ্ছে | আবোল তাবোলের কবিতার ইংরেজি অনুবাদ আর অ্যান্যালিসিস একসঙ্গে করে প্রকাশ করা বই - কাটতি আপনার বই এর মতো না হলেও, শুনলাম ভালোই বিক্রি হচ্ছে | আপনি ঝটপট কিনে পড়ে ফেলুন | তা না হলে গল্প বলতে থাকলে এই তোপসে সব ছাপিয়ে ফেলবে | সব কবিতার মানে তোপসের গল্পে ফাঁস হয়ে গেলে বন্ধুর বই বিক্রি যদি কমে যায়, সে আমাকেই দুষবে তখন! আপনার অনুরোধ রাখতে গিয়ে কাঠবুড়োটা বলে ফেললাম! তবে ভালো খবর  - আপনার ইংরাজি পড়তে অনীহা হলে, এখন বইটির বাংলা অনুবাদও পাওয়া যাচ্ছে ! দেজ পাবলিশিং কর্তৃক প্রকাশিত সেই বইটির নাম 'আলোয় ঢাকা অন্ধকার' | লেখক এবং অনুবাদক নীলাদ্রি রায় আপনার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ, কিন্তু এবার বড় বেলা হয়ে যাচ্ছে - আপনার শীতল বৈঠকখানা ত্যাগ করে বাইরের গরমের সঙ্গে যুদ্ধ করা ছাড়া আর গতি নেই! আজ আসি |

***

কাঠ বুড়োর ব্যাকস্টোরি শুনে লালমোহনবাবু যারপরনাই ইম্প্রেসেড | আমাকে বলেছিলেন যে ফেলুদার বন্ধু বই বার করে না থেকে থাকলে উনি নিজেই কাঠ বুড়োর বিশ্লেষণটা নিয়ে রিসলিকে সেন্ট্রাল-ক্যারেক্টার করে 'কাঠবুড়োর কাষ্ঠকাঠিন্য' নাম দিয়ে একটা ঐতিহাসিক উপন্যাসের কথা ভাবতেন |

আমার মতে, সেটা না হয়ে ভালোই হয়েছে | নামটা একটু "ইয়ে" হয়ে যাচ্ছিলো |

 ---------000--------

এই গল্পটিতে 'কাঠ বুড়ো' কবিতার যে অন্তর্নিহিত অর্থ দেওয়া হলো, সেটি এবং আবোল তাবোলের আরো অন্যান্য অনেক কবিতার অর্থগুলিও এই বইটিতে পাওয়া যাবে:  Rhymes of Whimsy – The Complete Abol Tabol. (ক্লিক করুন)| 

এই সেই বই, যেটা কিনা ফেলুদার ক্যালিফোর্নিয়া-প্রবাসী ছেলেবেলার বনধু প্রকাশ করেন|২৫৪ পৃষ্ঠার এই বইটি Amazon ও অন্যান্য অনলাইন রিটেলারের কাছ থেকে পাওয়া যায়: ভারতে দাম ৬০ টাকা; বিদেশে $১৯.৯৫ (পেপারব্যাক)| বইটির একটি  Facebook page (ক্লিক করুন) ও আছে, যেখানে আবোল তাবোলের কবিতা সম্পর্কে আরো তথ্য পাবেন| আছে বেশ কিছু অনুবাদ এবং কয়েকটি ভিডিও ও|





1 comment:

Arnab said...

বাহ